সময় ও মহাকাশ (নতুন তত্ত্ব)


আমার সময় ও মহাকাশ তত্ত্ব
(My theory of Space and Time) 
~মহর্ষি মহামানস


সমগ্র বিশ্বজুড়ে--- একটি বুদবুদ (Bubble)-এর মতো বহুমাত্রিক (Multidimensional), আপাতদৃষ্টিতে অবাধ অথবা প্রায় অবাধ শূন্যস্থান অস্তিত্বকে মহাকাশ বলা হয়ে থাকে।

মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই আমাদের এই মহাকাশ (Space) অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এবং মহাবিশ্বের সাথে সাথে ক্রমশই এই মহাকাশ প্রসারিত হয়ে চলেছে। এই মহাকাশ আসলে একপ্রকার অদৃশ্য অননুভূত--- বিশেষ কম্পাঙ্কের কণা দিয়ে গঠিত এক বিশেষ অস্তিত্ব। কোষবিভাজন প্রক্রিয়ার মতো এই কণাগুলি প্রয়োজনে চক্রবৃদ্ধিহারে নিজেদের বৃদ্ধি ঘটিয়ে থাকে। বিজ্ঞান এখনো তাকে আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়নি।

সাধারণভাবে, এই মহাকাশ আমাদের কাছে অদৃশ্য অননুভব‍্য এক অস্থিত্ব বিহীন অস্তিত্ব। তাই একে মহাশূন্য বলা হয়ে থাকে। তাইবলে, এই মহাকাশ পরম শূন্য নয়। পরমশূন্য রয়েছে মহাবিশ্বের বাইরে যে বহু মহাবিশ্বের সম্মিলিতরূপ মহাসৃষ্টি অবস্থান করছে, তার বাইরে। আদিসত্তার বাইরে।

আমাদের এই মহাকাশ মোটেও শূন্য নয়। সে তার নিজস্ব অস্তিত্ব ছাড়াও, নানারূপ মহাজাগতিক রশ্মি-- শক্তি, কণা এবং বিকিরণে ভরে আছে। সেইসব শক্তি ও কণাদের মধ্যে ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, আকর্ষণ-বিকর্ষণ সহ বিভিন্নরূপ কার্যকলাপে সাধারণত সে অংশগ্রহণ করে না। সে নিরপেক্ষ-- নিষ্ক্রিয় নির্বিকার। 

মহাকাশের মধ্যেই যে বিশ্বের সমস্ত কিছু অবস্থান করছে, শুধু তাই নয়, সমস্ত কিছুর মধ্যে বা ভিতরেও মহাকাশ রয়েছে বা বিরাজ করছে। মহাকাশ কোন কিছুকে ধারণ করে না--- বর্জনও করে না। 

মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই--  মহাকাশ ছাড়াও আরো দুটি অব‍্যক্ত অননুভবনীয় স্বতন্ত্র ভার্চুয়াল অস্তিত্বের সৃষ্টি হয়েছে। তা হলো 'সময়' আর 'ভাগ্য' (সময় বা Time ও ভাগ্য বা Destiny প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)। কেউ কেউ মহাকাশ আর সময়-কে মিলিয়ে গুলিয়ে ফেলেন। কিন্তু  সময় ও মহাকাশ দুটি স্বতন্ত্র অস্তিত্ব। সময় আর মহাকাশের মধ্যে বড় সম্পর্ক হলো-- তারা একইসঙ্গে একই ঘটনা থেকে জন্ম নিয়েছে। 

জলাশয়ের জলের ভিতরে মাছ যেমন, অনেকটা তেমনই এই মহাকাশের মধ্যে আমাদের অবস্থান। আমাদের সবদিকে--- ভেতরে ও বাইরে রয়েছে মহাকাশ। এই অরূপ মহাকাশকে কেউ কেউ তাদের ধারণা বা কল্পনা মতো বিভিন্ন রূপে বর্ণনা করেছেন। কিন্তু সেগুলির কোনটিই এই রহস্যময় মহাকাশের প্রকৃত রূপ বা অবয়ব নয়। মহাকাশ এখনও আমাদের কাছে অধরাই রয়ে গেছে।

এ প্রসঙ্গে অল্পবয়সে আমার লেখা একটি কাব্যগ্রন্থের ছোট্ট একটি অংশ মনে পড়ে গেল!

মহাশূন্য কেমন!?
বারবার একই প্রশ্ন---
তারপর শূন্য দৃষ্টি মেলে 
চেয়ে থাকো বেশ কিছুক্ষণ। 
খেই খুঁজে পাও না তুমি--- 
কি করেই বা পাবে! 
এখনো অনেক পথ বাকি--- 
সৃষ্টির রথ এখনো অন্ধকারে 
হাতরে হাতরে ছুটে ছুটে মরে 
আত্মানুসন্ধানের সেই উত্তরের আশায়।
---অংশানুক্রমে, বারবার 
যে প্রশ্ন উঁকি দেয় তোমারও ভিতরে।


মহাকাশকে বুঝতে হলে, একেবারে মূল থেকে ধাপে ধাপে এগিয়ে যেতে হবে। পরম শূন্যের মধ্যে আদিসত্তার অবস্থান। আর তার মধ্যেই বহু মহাবিশ্বরূপ মহাসৃষ্টি সহ মহাকাশ জন্ম নিয়েছে (আমার সর্বাধুনিক সৃষ্টিতত্ত্ব দ্রষ্টব্য)। আমার সৃষ্টিতত্ত্বের শুরুতেই পরমশূন‍্য সম্পর্কে একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আছে। বর্ণনাটি এইরূপ: 

পরমশূন্য! আদি-অন্তহীন নিরাকার প্রকৃত শূন্য। আমাদের জানা মহাশূন্য নয়। মহাবিশ্বের এলাকা ছাড়িয়ে আদিসত্তার অঞ্চল পেরিয়ে--- বিদ্যমান যে অনন্ত আকাশ--- সেই পরমশূন্য! নিস্তব্ধ-- নিস্তরঙ্গ-- নির্বিকার অস্তিত্বহীন এক অস্তিত্ব। অপরিবর্তিত অবিনাশী অবিচল সেই শূন্যে--- এখানকার কোনো সচল গতিশীল বস্তু বা শক্তি প্রবেশ করতে অক্ষম। 

সেই পরমশূন‍্যের মধ্যে আদিসত্তার অবস্থান। আর সেই আদিসত্তার মধ্যেই জন্ম নিয়েছে মহাসৃষ্টি। বহুসংখ্যক মহাবিশ্ব নিয়ে এই মহাসৃষ্টি। তারমধ্যে একটি হলো আমাদের এই মহাবিশ্ব।


আদিসত্তার (অস্তিত্ব) সম্পর্কে আমার সৃষ্টিতত্ত্বে যেমন বর্ণনা আছে:
    সেই পরমশূন্যের মাঝে একটি নির্দিষ্ট সীমা নিয়ে আদিসত্তার অবস্থান। আদিসত্তা প্রধানত আদি আদিকণা ---পরমকণা--- আদিশক্তি দিয়ে গঠিত। এছাড়াও তা' আদি বস্তুকণা, অসংখ্য যুগ্মকণা এবং বিকিরণে পরিপূর্ণ। 

আদি বিস্ফোরণের (সৃষ্টিতত্ত্ব দ্রষ্টব্য) মধ্য দিয়ে সৃষ্টি হয়েছে বহু মহাবিশ্ব-বীজ দিয়ে গঠিত ফল রূপ--- প্রাক মহাসৃষ্টি। আর, একসময় এই ফলটির মধ্যে থাকা বিশ্ববীজগুলির মধ্যে সংঘটিত হয় মহাবিস্ফোরণ। যা থেকে ক্রমশ অঙ্কুরিত হয়ে--- অসংখ্য মহীরুহের মতো  বিকশিত হয়ে চলছে মহাবিশ্বগুলি।

আদি কণার বিভিন্ন মাত্রার কম্পাঙ্ক থেকেই বিভিন্ন মৌলিক কণা ও শক্তি সৃষ্টি হয়েছে। কণার এই কম্পাঙ্কের মূলে রয়েছে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং কোডের মতো একপ্রকার প্রোগ্রামিং কোড।

এখানে উল্লেখ করা প্রয়োজন, আদিকণার কোনো 'ডাইমেনশন' নেই। আদিকণা হলো এক ভার্চুয়াল অস্তিত্ব, যা সৃষ্টি হয়েছে ঐরূপ প্রোগ্রামিং কোড দ্বারা অথবা যার মূলে রয়েছে প্রোগ্রামিং কোড। আদিকণা থেকে সৃষ্ট বিভিন্ন কম্পাঙ্কের বিভিন্ন কণাগুলি আসলে অব‍্যক্ত প্রোগ্রামিং কোডের-ই মূর্ত রূপ।


।। সময় আমার সময় ।। (১ম পর্ব)
~মহর্ষি মহামানস (সুমেরু রায়)



মন যেমন মস্তিষ্কের ক্রিয়া হতে উৎপন্ন একটি অস্তিত্ব, কতকটা তেমনই, সময়ও--- যে কোন রূপ ক্রিয়া হতে উৎপন্ন এক বিশেষ অস্তিত্ব। দৃশ‍্যতঃ অস্তিত্বহীন এক অস্তিত্ব। এই নিদর্শনটি শুধুমাত্র বোঝানো সুবিধার জন্য।

ক্রিয়া থাকলেই তা' থেকে সময় সৃষ্টি হবে, --- সেই ক্রিয়ার নিজস্ব সময়। আর ক্রিয়া যদি নিয়ম-শৃংখলার মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট গতিতে এবং নির্দিষ্ট পথে চক্রাকারে--- অবিরামভাবে পুনঃপুনঃ সংঘটিত হয়ে চলে,  তখনই সৃষ্টি হয় বোধযোগ্য এবং পরিমাপযোগ্য সময়। এই রূপ সময়ের ভিত্তিতে অপরাপর বস্তু--- ব্যক্তি প্রভৃতির ক্রিয়াকাল এবং জীবৎকাল পরিমাপ করা যায়।

সংক্ষেপে, পৃথিবীর ঘূর্ণন ক্রিয়া অথবা ঐরূপ চক্রাকারে (লুপ) ঘটে চলা কোনো ক্রিয়ার বিভিন্ন ভাগ বা অংশ বা পর্ব গুলিকে অথবা সমগ্র অংশকে বোঝার ও বোঝানোর সুবিধার্থে ক্রিয়াকাল রূপে একটি অস্তিত্বের কল্পনা করে, তাকে 'সময়' নামে অভিহিত করা হয়েছে।

কোন কিছুর জীবৎকাল বা আয়ুষ্কাল অথবা বয়স বলতে, সাধারণভাবে--- তার জন্ম থেকে মৃত্যু বা সৃষ্টি থেকে লয়, অথবা আয়ুষ্কালের একটি নির্দিষ্ট অংশ পর্যন্ত, পৃথিবীর (নিয়মিত গতিরূপ ক্রিয়া থেকে উদ্ভূত--- পরিমাপযোগ্য) সময়ের হিসাবে ---তার স্থায়িত্বকাল টুকু বোঝায়। প্রত্যেকটি বস্তু, পদার্থ ও জীবের নিজস্ব ক্রিয়া আছে এবং (পৃথিবী বা অন্য কারো সময়ের হিসাবের মধ্যে থাকলেও) আছে তার নিজস্ব সময়।

 ব্যবহারিক ক্ষেত্রে আমরা যখন 'সকাল ---সন্ধ্যা' বলি,  তখন শুধু সময়কেই বোঝাই না, ---সেই নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত চক্রাকারে ঘটে চলা বিশেষ কোনো এক বা একগুচ্ছ প্রাকৃতিক পরিবর্তন এবং তৎসম্পর্কিত অন্যান্য ক্রিয়া বা ঘটনা, পরিবেশ ও পরিস্থিতিকেও আমরা সময় বা সময়ের দ‍্যোতক রূপে গণ্য করে থাকি।

 সময়কে তার এক এক পর্বে, এক একটি বিশেষ রূপে দেখতে অভ্যস্ত আমরা। ওই রূপটাই আমাদের কাছে সময় রূপে প্রতিভাত হয়। কিন্তু প্রকৃতই সময়ের কোন রূপ নেই। ঘটনাক্রমে--- সময়ান্তরে প্রকৃতির পরিবর্তিত রূপ থেকেই আমাদের সময়ের ধারণা জন্মায়।

বলা হয়---, সময়ের ছাপ, সময়ের ক্ষমতা, সময়ের দান প্রভৃতি। যেন, সময়ের নিজস্ব কোন শক্তি বা ক্ষমতা আছে, যার দ্বারা সে অনেক কিছু করতে পারে। বাস্তবে সময়ের স্বাধীন কোন রূপ- গুণ- ক্ষমতা নেই। অবিরাম কার্যক্রমের বা ঘটনাক্রমের ধারায়, একের পর এক নানা ক্রিয়া বা নানা ঘটনা ঘটে চলেছে। বিভিন্ন ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার মধ্য দিয়ে ক্রমান্বয়ে ঘটে চলা ঘটনাপ্রবাহের--- এক একটি পর্বে এক একটি বিশেষ রূপ, বিশেষ ক্ষতি বা প্রাপ্তি ঘটে থাকে। সেগুলিকে আমরা সময়ের মাপে ফেলে, ঘটনা পরম্পরাকে আমাদের ধারণার মধ্যে এনে থাকি। বলে থাকি, 'যে সময়ে যা ঘটার তাই ঘটবে,  সময় হলেই ঘটবে'....ইত্যাদি। কিন্তু তার মানে এই নয়, যে, সময়ই এই ঘটনা গুলি ঘটাচ্ছে। সময় যে একটা শক্তিশালী অস্তিত্ব তা' বাস্তবে এখনো প্রমাণিত হয়নি।

এই প্রসঙ্গে বলি, সময়ের মত ভাগ্যও ক্রিয়া হতে উদ্ভূত--- আপাতদৃষ্টিতে অস্তিত্বহীন এক বিশেষ অস্তিত্ব। সৃষ্টি শুরু হওয়ার সাথে সাথেই এরা অর্থাৎ জাগতিক সময় ও ভাগ্য--- উভয়েই অস্তিত্ত্ব সম্পন্ন হয়ে ওঠে (ভাগ্য সম্পর্কে প্রবন্ধ দেখুন)।

আমরা কতটা গতিসম্পন্ন? আমাদের সক্রিয়তা--- গতিশীলতা ছাড়াও, আমরা পৃথিবীর গতির অধীনে আছি। শুধু পৃথিবী নয় সৌরজগতের গতির সাথে আমরা যুক্ত আছি। আবার, আমাদের নীহারিকাসহ সমগ্র মহাজাগতিক গতির মধ্য দিয়ে আমরা অভাবনীয় গতিতে গতিময়।

উচ্চ সক্রিয়তা বা দ্রুতগতিসম্পন্ন কোন বস্তু বা জীব--- নিম্ন সক্রিয়তা বা বিলম্বিত গতিসম্পন্ন সম-জাতীয় বস্তু বা জীবের তুলনায়  (কোনো অনিয়ম বা অঘটন না ঘটলে) অনেক পূর্বেই তার নির্দিষ্ট কার্য সম্পন্ন করবে, লক্ষ্যে পৌঁছে যাবে, পরিণতি লাভ করবে, ক্ষয়প্রাপ্ত হবে, বুড়িয়ে যাবে এবং ফুরিয়ে যাবে বা লয় প্রাপ্ত হবে। অর্থাৎ তার জীবনকাল হবে অপরটির তুলনায় অনেক কম, তার নিজস্ব সময়ের ভিত্তিতে দ্রুত বয়স বেড়ে যাওয়ার কারণে।

তবে, অধিক আয়ুষ্কালের কোন জীব বা মানুষ যদি উচ্চ সক্রিয়তা সম্পন্ন হয়, সেক্ষেত্রে সে দ্রুত বুড়িয়ে যাবে না, যদিনা সে কোন রোগ-ব্যধির দ্বারা আক্রান্ত হয়, যদিনা প্রয়োজনীয় খাদ্য-পানীয় প্রভৃতির অভাব ঘটে, এবং অঘটন কিছু না ঘটে।

তবে, আইনস্টাইনের থিওরী অনুযায়ী বস্তু বা ব্যক্তির সক্রিয়তা বা গতি যদি দ্রুততম হয়ে--- আলোর গতির নিকটবর্তী হয়, তখন তার সময় চলতে থাকবে খুব ধীরগতিতে। ফলতঃ তার বয়সও অতি ধীর গতিতে বাড়তে থাকবে। যদি না কোন দুর্ঘটনা ঘটে, তার জীবনকাল বা আয়ুষ্কাল হবে সাধারণ গতি সম্পন্ন অনুরূপ বস্তু বা ব‍্যক্তির তুলনায় অনেকগুণ বেশি। যদিও, কোন বস্তু আলোর গতির সমান গতি লাভ করলে, তখন তার আর বস্তুরূপ অস্তিত্ব থাকবে না। পরবর্তীতে আমরা বুঝতে চেষ্টা করবো, এই থিওরী কতটা সঠিক।

আধ‍্যাত্মিক দর্শনের দৃষ্টিকোণ থেকে:
উচ্চতর চেতন স্তর থেকে উচ্চতম চেতন স্তরে--- সময় ক্রমশ খুব বেশি ধীর গতিশীল। পরমাত্মার নিদ্রাভঙ্গ কালের পর থেকে নিদ্রারম্ভ কালের পূর্ব পর্যন্ত, অর্থাৎ তার একটি দিন (মহাবিশ্বের সৃষ্টি--- স্থিতি--- গতি লয়) আমাদের পৃথিবীর কাল অনুসারে তা' কোটি কোটি বছরের সমান। (আমার মহাসৃষ্টিতত্ত্ব দ্রষ্টব্য)

মহা-সৃষ্টিতত্ত্বে আমরা দেখেছি, শুরুতেই সব নির্দিষ্ট হয়ে গেছে। কোথায় কি ঘটবে, কখন কি ঘটবে। সৃষ্টি শুরুর সাথে সাথে ঈশ্বর (মহাবিশ্ব অস্তিত্ব) বা মহাবিশ্বের কালচক্রের চলা শুরু হয়ে গেছে।

তোমার জন্মের সাথে সাথে, তোমার নিজস্ব কালের ঘড়ির কাঁটা চলতে শুরু করে দিয়েছে। একটি যন্ত্র তৈরি হওয়ার পর স্বাভাবিক ভাবেই নির্দিষ্ট হয়ে যায়, (পরিবেশ পরিস্থিতি ও তার উপাদান সাপেক্ষে) কতকাল সে সার্ভিস দেবে এবং কতকাল সে তার স্বাতন্ত্র‍্য‍ নিয়ে টিকে থাকবে। আমাদের শরীর যন্ত্রের ক্ষেত্রেও তেমনই।
 * পূর্বোক্ত রচনাটির রচনাকাল~ 1988




প্রসঙ্গ: সময় (২য় পর্ব)

কোনকিছুর গতি বা সক্রিয়তা থেকেই 'সময়' নামে একটি ভার্চুয়াল অস্তিত্বের সৃষ্টি হয়। মহাজাগতিক সময়ের জন্ম হয়েছে, মহাবিস্ফোরণের ( Big Bang) মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই।

প্রত‍্যেকটি গতিশীল বা সক্রিয় বস্তুর নিজস্ব সময় আছে। আমরা পৃথিবীর সময়ের অধীনে হলেও, আমাদের প্রত‍্যেকেরই আছে নিজস্ব সময়। একজনের সক্রিয়তা বা কার্যকলাপের ধরণ বা প্রকৃতির উপরেই তার নিজস্ব সময়ের ধরণ নির্ভর করে।

ব‍্যবহারীক ক্ষেত্রে, সময় হলো~ কোনো দুটি ঘটনার (অথবা কোনো ধারাবাহিক ঘটনার মধ্যে দুটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার) মধ্যবর্তী দূরত্ব বা ব্যবধান বা মেয়াদ। যা আমরা নির্দিষ্ট গতিতে নিয়মিতভাবে অবিরাম সংঘটিত  ঘটনা হতে উদ্ভূত পরিমাপবোধক সময় নামক এক ভার্চুয়াল অস্তিত্বের ভিত্তিতে উপলব্ধি করে থাকি। যেমন, পৃথিবীর নিয়মিত আবর্তন থেকে উৎপন্ন হওয়া সময়ের ভিত্তিতে আমরা কোনো ঘটনার সময় নির্ধারণ করে থাকি।

সময় কি শুধুই মানুষের মনোগত বা ধারণাগত একটা অস্তিত্ব, নাকি তার বাস্তবতা-ও আছে! কেউ উপলব্ধি করুক আর নাই করুক, সময় তার নিজস্ব অস্তিত্বে বিরাজমান। বরং কখনো কখনো সময় সম্পর্কে মানুষের ধারণা ভ্রান্ত হতে পারে। কখনো অল্প সময়কে কারোকাছে অনেক সময় বলে মনে হতে পারে। আবার তার বিপরীতও হতে পারে। যেমন কোনো চক্র খুব দ্রুত বেগে ঘুরতে থাকলে, কোনো দর্শকের মনে হতে পারে, চক্রটি ধীরগতিতে ঘুরছে, এবং/অথবা বিপরীত দিকে ঘুরছে। এটা হলো দর্শকের দৃষ্টি বিভ্রম বা তার ভ্রান্ত ধারণা। বাস্তব তা নয়।

কোন বস্তু বা কোনকিছু মন্থর অথবা দ্রুতগতিসম্পন্ন হলে, তার কোন একটি (ঘটনার) অবস্থান থেকে অপর একটি (ঘটনার) অবস্থানে পৌঁছাতে (নিয়মিত গতিশীল অপর একটি ঘটনা থেকে উৎপন্ন পরিমাপযোগ্য সময়ের ভিত্তিতে, দীর্ঘ সময় অথবা অল্প সময় ব্যয় হতে পারে।

ওই গতিশীল বস্তুটির নিজস্ব সময় কিন্তু তার ঐ গতির উপরেই নির্ভরশীল। সেখানে, তার গতি মন্থর হলে, তার সময়ও মন্থর হবে। তার গতি দ্রুত হলে, তার সময়ও দ্রুত হবে। এর ব্যতিক্রম বা বিপরীত হবে না। অর্থাৎ তার গতি দ্রুত হলে, তার সময় মন্থর হয়ে যাবেনা।

আপেক্ষিকতা দুই প্রকারের। প্রথমটি হলো, একাধিক বিষয়বস্তুর মধ্যে তুলনামূলক বিচার। আর দ্বিতীয়টি হলো, কোনকিছুর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায়, তার নিজের সঙ্গে নিজের তুলনামূলক বিচার।

আমি এখানে যে আপেক্ষিকতার উল্লেখ করছি, তা হলো কোনকিছুর নিজের সঙ্গে নিজের আপেক্ষিকতা। এখানে উচ্চ গতিশীল কোনকিছুর সঙ্গে তারই অপেক্ষাকৃত নিম্ন গতিসম্পন্ন অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

কোনকিছুর সময় মন্থর হওয়ার অর্থ তার আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়া। সাধারণত, কারও গতি যদি আগের চেয়ে বেশি বা দ্রুত হয়, তবে তার সময়ের গতিও আগের চাইতে আরও দ্রুত হবে। এবং ফলস্বরূপ, তার আয়ু হ্রাস পাবে। বস্তুর গতি বা সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে, বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার কারণে তার আয়ুষ্কাল কমে যাবে।

তবে আইনস্টাইনের মতে, কোনও কিছু যদি আগের চাইতে খুব দ্রুতবেগে অগ্রসর হয়, তবে তার সময় হ্রাস পাবে এবং তার আয়ু বৃদ্ধি পাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তার নিজের গতি হ্রাস না হলে, কী করে তার (নিজস্ব) সময় মন্থর হয়ে যায়!

কোন বস্তু বা কোনকিছু মন্থর অথবা দ্রুতগতিসম্পন্ন হলে, তার কোন একটি (ঘটনার) অবস্থা থেকে অপর একটি (ঘটনার) অবস্থায় পৌঁছাতে (নিয়মিত গতিশীল অপর একটি ঘটনা থেকে উৎপন্ন পরিমাপযোগ্য সময়ের ভিত্তিতে) দীর্ঘ সময় অথবা অল্প সময় ব্যয় হতে পারে।

ওই গতিশীল বস্তুটির নিজস্ব সময় কিন্তু তার ঐ গতির উপরেই নির্ভরশীল। সেখানে, তার গতি মন্থর হলে, তার সময়ও মন্থর হবে। তার গতি দ্রুত হলে, তার সময়ও দ্রুত হবে। এর ব্যতিক্রম বা বিপরীত হবে না। অর্থাৎ তার গতি দ্রুত হলে, তার সময় মন্থর হয়ে যাবেনা।

কোন গতিশীল বস্তুর উপর বাইরের কোনোরূপ বল বা শক্তি প্রযুক্ত না হলে, বস্তুর গতি হতে উৎপন্ন 'সময়' স্বাভাবিকই থাকবে। তার সময় মন্থর হয়ে যাবে না।

কোন বস্তু যদি মহাশূন্য পথে (যদিও প্রকৃতপক্ষে শূন্য নয়) গতিশীল থাকে, সেক্ষেত্রে তার ক্ষয়ক্ষতি কম হবে অথবা হবেনা। তার আয়ু প্রায় একই থাকবে, অথবা তার আয়ু তেমন কমবে না। এটাই সাধারণ ধারণা।

কিন্তু বস্তুটী খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন হলে, তার আকর্ষণ ক্ষমতা বেশি হবে, তার 'গ্র‍্যাভিটি' বেশি হবে। তারফলে, প্রচুর মহাজাগতিক কণা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর তাতে তার গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।

সেই উচ্চগতি সম্পন্ন বস্তুটি ক্রমশই মহাজাগতিক কণায় ভরে উঠতে থাকবে। অর্থাৎ তার মধ্যে মহাজাগতিক কণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে, এবং বস্তুটির স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকবে ক্রমশই।

এর ফলে ক্রমশই সেই বস্তুটীর আয়ুষ্কাল কমতে থাকবে। আর আয়ুষ্কাল যত কমতে থাকবে, তার সময় ততই দ্রুততর হবে। দ্রুত ফুরিয়ে আসবে তার সময়।

প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী, কোনকিছুর গ্র‍্যাভিটি যত বেশি হবে, তার সময় ততই মন্থর হতে থাকবে। কিন্তু সেই বস্তুটির মধ্যে যদি আত্মরক্ষার ব‍্যবস্থা না থাকে, যদি সে মহাজাগতিক এনার্জি বা কণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারে, সেক্ষেত্রে তার আয়ুষ্কাল কমে যাবে। আর আয়ুষ্কাল কমে যাওয়ার অর্থই হলো, তার (নিজস্ব) 'সময়' দ্রুতগতি সম্পন্ন হওয়া।

এই প্রসঙ্গে বলি, উচ্চতম গতিশীল আলোর ক্ষেত্রেও তার 'সময়' সৃষ্টি হয়ে থাকে। বহু দূরের গ‍্যালাক্সী থেকে পৃথিবীতে আসতে, আলোর অনেক সময় লাগে। তাই বলে, উচ্চতম গতির কারণে তার 'সময়' মন্থর হয়েছে, এমন কথা বলা যায়না।

মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার মূহূর্তেই টাইম, স্পেস এবং ডেসটিনি একইসঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে মহা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে। এই ভার্চুয়াল অস্তিত্ব গুলি একে অপরের উপর নির্ভরশীল হলেও এবং একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও এদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রয়েছে।

এই 'সময়' নামে ভার্চুয়াল সত্তাটি মহাবিশ্ব সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই অস্তিত্ব সম্পন্ন হয়েছে। মহাবিশ্ব লয় প্রাপ্ত হলেই, 'সময়' অস্তিত্বেরও বিনাশ ঘটবে তখন।


এবার আসুন, আমরা অবগুণ্ঠিত সত্য উদ্ঘাটনের জন্য 'সময়'-কে আরও গভীরভাবে বিচার-বিশ্লেষণ-তদন্ত করে দেখি:

প্রত‍্যেকটি গতিশীল বা সক্রিয় অস্তিত্বের রয়েছে তার নিজস্ব সময়। আর যেহেতু এই জগতে কোন কিছুই সম্পূর্ণ নিষ্ক্রিয় নয়, ভিন্ন ভিন্ন রূপে সক্রিয়। তাই অস্তিত্বশীল সবকিছুরই আছে নিজের নিজের মতো সময়।

সময় কোনো একটি মাত্র অস্তিত্ব নয়। মহাজাগতিক সময় এবং পৃথিবীর সময়ের মতোই বিভিন্ন প্রকারের সক্রিয়তা সম্পন্ন অসংখ্য অস্তিত্বের প্রত‍্যেকেরই রয়েছে বিভিন্ন মাত্রার বা প্রকারের সময়।

কোনকিছু অস্তিত্ব সম্পন্ন হওয়া অথবা জন্ম নেওয়ার সাথে সাথেই তার সময়ও অস্তিত্ব সম্পন্ন হয়ে ওঠে বা জন্ম নেয়। কোনোকিছুর অস্তিত্ব বিলুপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তার সময়ও অস্তিত্বশীল থাকে। সে যদি আপাতদৃষ্টিতে স্থির কিছু হয়, অর্থাৎ উল্লেখযোগ্য সক্রিয় বা গতিশীল কিছু না হয়, তবুও তার সময় চলতে থাকে তার সক্রিয়তার অনুরূপ খুব ধীর গতিতে। কারণ এই জগতে কোনকিছুই সম্পূর্ণ স্থির বা নিষ্ক্রিয় নয়। তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত হওয়ার সাথে সাথেই তার সময়েরও বিলোপ ঘটে তখন। তাই বলে, সময়ের নিজস্ব কোনো গতি বা সক্রিয়তা নেই। সময় হলো (বোঝানোর সুবিধার্থে) অস্তিত্বশীল কোনকিছুর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা, তার আত্মার মতো এক অস্তিত্ব।

একেরপর এক ক্রমান্বয়ে ঘটে চলা ঘটনা, অথবা পরিবর্তনের বিভিন্ন পর্বগুলোকে আমরা সময়ের বিভিন্ন মাপ রূপে নির্ধারণ করে থাকি। এবং তাদের অন্তর্বর্তী ডিউরেশনকে সময় বলে থাকি। সময়ের বাস্তব অস্তিত্ব আমরা উপলব্ধি করতে পারিনা। তাই আমাদের কাছে বাস্তবে সময় বলে কিছু নেই।

কোনো ঘটনার বা পরিবর্তনের জন্য অপেক্ষা করা, এবং সেই অপেক্ষার মেয়াদ (duration of waiting) থেকে সময় সম্পর্কে একটা ধারণা জন্মায় আমাদের। কোনকিছুর ক্রমবিকাশ অথবা ক্রমবর্ধমান কোনকিছুকে লক্ষ্য করলেও সময় সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। এছাড়াও, ক্রমাগত একই গতিতে পুনঃপুনঃ আবর্তিত কোনকিছু (যেমন পৃথিবী ও ঘড়ি) থেকে উৎপন্ন পরিমাপযোগ‍্য সময়ের ধারণা লাভ করে থাকি আমরা।

এখানে বলা আবশ্যক যে কোনকিছুর জন্য অথবা কোনো ঘটনার জন্য অপেক্ষা করা হলো একপ্রকার মানসিক ও শারীরিক প্রক্রিয়া (বা প্রসেস) যা ক্রমান্বয়ে এগিয়ে যায়। যা শরীর-মনের বহু সূক্ষ্ম ঘটনার উপর ক্রমে ক্রমে গড়ে ওঠা এক বিশেষ কার্যক্রম। আমাদের শরীরের মধ্যে চলতে থাকা বায়ো-ক্লকের অনেকগুলো পালস্ অতিবাহিত করা বা অতিক্রম করার এক প্রক্রিয়া বিশেষ। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে আমাদের মনে সময়ের ধারণা মিশে থাকলেও,  এখানে সময়ের কোনরূপ কার্যকর ভূমিকা (role) থাকেনা।

যে ঘটনার জন্য অপেক্ষা করা হয়, সেও বহুকিছু সাপেক্ষে একেরপর এক ক্রমান্বয়ে ঘটে চলা বহু ঘটনার ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া, কার্য-কারণ এবং মিশ্রণে  উৎপন্ন হওয়া এক ঘটনা-ফল বিশেষ। এক্ষেত্রেও সময়ের কোনো ভূমিকা (role) নেই।

লক্ষ লক্ষ বছর ধরে পৃথিবীর ঘুর্ণন জনিত সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে চলতে জীব ও উদ্ভিদের মধ্যে তাল ও সময় বোধ জন্মেছে, এবং প্রত‍্যেকের মধ্যে একটা বায়ো-ক্লক তৈরী হয়েছে।

এই পার্থিব জগতে, সময় হলো--- নিরাকার নিষ্ক্রিয় নিরপেক্ষ নিরাসক্ত নির্বিকার এক অব‍্যক্ত অননুভবযোগ‍্য ভার্চুয়াল অস্তিত্ব। বিমূর্ত সময়কে একমাত্র ম‍্যাথামেটিক‍্যাল মডেলের মাধ্যমেই কিছুটা মূর্ত করে তোলা যায়। তাই ইন্দ্রিয়াতীত জগতে তার একটা ডাইমেনশন থাকলেও, এই বস্তু জগতে যে তার একটা ডাইমেনশন আছে, এই ধারণা সাধারণ মানুষের কাছে নেহাতই একটা কল্পনা বলেই মনে হয়।

প্রতিটি সক্রিয় অস্তিত্বই সময়ের জন্ম দিয়ে থাকে। কিন্তু সময় কোনো বাস্তব অস্তিত্ব বা ঘটনার জন্ম দেয় বলে আমাদের জানা নেই। আমরা দেখেছি, কোনকিছুর অস্তিত্ব এবং তার গতি বা সক্রিয়তার উপরে সময় অস্তিত্ব নির্ভরশীল। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন আসবে, সময়ের উপর কি কোনকিছু নির্ভরশীল? এর উত্তর হলো~ না, বাস্তব জগতে সময়ের নিজস্ব কোনো কার্যকলাপ দেখা যায় না। তাই কোনকিছু সময়ের উপর নির্ভরশীল একথা বলা যায় না।

পরম্পরাগতভাবে একটা ঘটনা থেকে জন্ম নেয় এক বা একাধিক ঘটনা। এইভাবে সাকসেসিভ স্ট্রিম অফ ইভেন্টস চলতে থাকে। তাই, কোনো ঘটনা ঘটার পিছনে অন‍্য কারো হাত নেই বলেই আমরা মনে করি।

কোনকিছুর নিয়মিত গতি হতে উৎপন্ন পরিমাপ যোগ্য সময়ের সাপেক্ষে, অপর সক্রিয় বা গতিশীল কোনকিছুর সময় আমাদের ধারণায় স্লো বা ফাস্ট মনে হতে পারে। এবার, কোনকিছুর গতি বা সক্রিয়তা যদি তার নিজেরই পূর্বাবস্থার তুলনায় মন্থর বা দ্রুত হয়, সেক্ষেত্রে তার নিজস্ব সময়ও স্লো বা ফাস্ট হবে।

এখানে 'সময়ের স্লো বা ফাস্ট হয়ে যাওয়া' বিষয়টি বাস্তবে সময় সংক্রান্ত নয়, বিষয়টি হলো কোনকিছুর গতি সংক্রান্ত। তার গতি স্লো বা ফাস্ট হয়ে যাওয়া। তবে, যেহেতু কোনকিছুর গতি বা সক্রিয়তা থেকেই সময়ের সৃষ্টি হয়েছে, তাই, কোনকিছুর গতি স্লো বা ফাস্ট হলে, তার সময়ও তার সাথে সাথেই স্লো বা ফাস্ট হবে। তবে বাস্তব জগতে সময়ের সেই গতি আমরা অনুভব করতে পারবো না।


 আমি আমার 'এগজ‍্যাক্টলি হোয়াট ডেস্টিনি ইজ' প্রবন্ধে বলেছি, মহাবিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে মহাবিশ্বের জন্ম মূহুর্তেই তিনটি অননুভবযোগ‍্য ভার্চুয়াল অস্তিত্ব সৃষ্টি হয়েছে। তারা হলো--- মহাকাশ, সময় ও ডেস্টিনি। মহাবিশ্বের জন্ম মূহুর্তেই ঠিক হয়ে যায়--- পরবর্তীতে কখন~ কোথায়~ কি কি ঘটবে এবং কিভাবে ঘটবে ('ডেস্টিনি ফর্ম দি ভিউপয়েন্ট অফ সায়েন্স' প্রবন্ধ পড়ুন )।

সবশেষে, এবার আসছি আসল কথায়, যা জানলে সময় সম্পর্কে সব ধারণাই বদলে যাবে এবং সময় সংক্রান্ত সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। সময়ের প্রকৃত অস্তিত্ব হলো~ 'S-existence' । এই অধরা অননুভবযোগ‍্য অস্তিত্বটিকে ভালোভাবে বুঝতে হলে, আমার 'S-existence and its contrary existence' প্রবন্ধটি পড়তে হবে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে।

এই লিঙ্ক ফলো করুন: https://sumeruscience.blogspot.com/2019/10/s-existence-and-its-contrary-existence.html?m=1

'সময়' অস্তিত্বটি আর কিছু নয়, আসলে 'সময়' হলো~ একটি দিব‍্য অস্তিত্ব বা S-existence! 





।। সময় ও বয়স ।। (৩য় পর্ব)
~মহর্ষি মহামানস


 একটি জীব বা মানুষের ক্ষেত্রে, তার বয়স পৃথিবীর সময়ের মাপকাঠিতে মাপা হলেও, তার নিজস্ব সক্রিয়তার ভিত্তিতে--- নিজস্ব সময়ের গণ্ডিতে সে বাঁঁধা। যারা আয়ুষ্কাল একশো বছর (পৃথিবীর সময়ের পরিমাপে) সে দশ বছর বয়সে অল্পবয়স্ক কিশোর। আর যারা আয়ুষ্কাল পনের বছর সে দশ বছর বয়সে প্রৌঢ়।

অধিক আয়ুষ্কালের জীবদের ক্ষেত্রে অন্যান্য পর্বের মতো শৈশবও দীর্ঘহয়ে থাকে। প্রাপ্তবয়স্ক হতেই লেগে যায় অনেক সময়। স্বল্প আয়ুষ্কালের জীবরা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই দ্রুত সক্রিয় হয়ে ওঠে। কয়েক ঘন্টা থেকে কয়েক দিনের মধ্যেই খাদ্য সংগ্রহ এবং বংশ বৃদ্ধিতে সক্ষম হয়ে ওঠে তারা। অতীতে মানুষের আয়ুষ্কাল বেশি, সক্রিয়তা ছিল এখনকার তুলনায় অনেক কম। এখন আয়ুষ্কাল কমে গেছে সক্রিয়তা বেড়েছে।

মূলতঃ সক্রিয়তার উপরেই--- বয়স, পরিপক্কতা, জ্ঞান-চেতনা ও বিকাশাদি নির্ভরশীল। পৃথিবীর সময় দিয়ে তার সঠিক পরিমাপ করা যাবে না। জীবের এই সক্রিয়তা শুধু আপাত জীবনের সক্রিয়তাতেই সীমাবদ্ধ নয়। অতীতের অসংখ্য জীবনের সক্রিয়তা রয়েছে এর পিছনে।

বংশানুক্রমে অর্জিত পরিপক্কতা--- চেতনাদি আসলে, পূর্বপুরুষদের ঐসব জীবনে প্রাপ্ত শারীরিক অবস্থা, পরিবেশ- পরিস্থিতি এবং ঘটনাচক্র সাপেক্ষে সক্রিয়তা হতে উৎপন্ন পরম্পরাগত ফসল।

একটি জীবের সক্রিয়তা থেকে লব্ধ জ্ঞান-অভিজ্ঞতা-চেতনা বংশানুক্রমে উত্তর-পুরুষদের মধ্যে সমানভাবে সঞ্চারিত হলে কোন কথাই ছিল না। সে ক্ষেত্রে সবারই বয়স, চেতনা, সক্রিয়তা হতো প্রায় সমান। কিন্তু তা ঘটেনি। যতদিন পর্যন্ত বিশুদ্ধ--- মৌলিক প্রকৃতির বা জাতির জীব ও উদ্ভিদ ---একই পরিবেশ-পরিস্থিতিতে নিজেদের স্ত্রী-পুরুষের মধ্যেই মিলন সীমাবদ্ধ রাখতে পেরেছে, ততদিন কোন জটিলতা সৃষ্টি হয়নি। প্রত্যেকের নবজাতক বংশধরদের মধ্যে প্রায় সমান ভাবে সঞ্চারিত হয়েছে তাদের রূপ-গুণ-চেতনা, প্রকৃতি ইত্যাদি।

বিভিন্ন চেতন স্তরের ভিন্ন ভিন্ন মানব জাতি বা প্রকৃতির মধ্যে মিলন ঘটার পর থেকেই দেখা যায়, প্রতিটি নবজাতকের মধ্যে---   রূপ-গুণ-চেতনা-প্রকৃতি আর সমান ভাবে বিস্তার লাভ করছে না। দিনের পর দিন--- যত বেশি মিশ্রণ ঘটছে,ততই বৈচিত্র্যে ভরে উঠছে ধরিত্রী।

মৌলিক জাতির সক্রিয়তা একটি নির্দিষ্ট গতিতে--- নির্দিষ্ট বাঁধাধরা পথে, নির্দিষ্ট চরিত্রগত বা আচরণগত বৈশিষ্ট্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ফলে, সেখানে চেতনার বিকাশও অতি সীমিত। ক্রমাগত মিশ্রণের ফলে বিভিন্ন প্রকৃতি, আকৃতি আচরণ, বৈশিষ্ট্য, গতি, চাহিদা ও চেতনা প্রভৃতির বিভিন্ন ভাগের সমন্বয়ে বহু বৈচিত্র্যময় সমৃদ্ধ চেতনাসম্পন্ন অতি সক্রিয় সংকর জাতির সৃষ্টি হয়ে চলেছে। ফলতঃ মানুষের মনের বয়স বৃদ্ধি পাচ্ছে দ্রুত হারে।

আপাতদৃষ্টিতে অনেকের মনে হতে পারে, উন্নতির চাইতে অবনতি-ই বেশি হচ্ছে। মানুষ এগিয়ে না গিয়ে--- যেন দিন দিন ক্রমশ পিছিয়ে যাচ্ছে--- অবনতির দিকে। আসলে কিন্তু তা নয়, এখানে শুধু এগিয়ে চলাই আছে, পিছনো নেই। নেই থেমে থাকাও।


* 'সময়'-এর সঙ্গে 'ভাগ্য'-এর খুব নিকট সম্পর্ক রয়েছে। তাই, 'ভাগ্য' ও 'Destiny' -এর উপর আমার লেখা ব্লগ দুটি পড়তে অনুরোধ করছি।


Comments

Popular posts from this blog

S-Existence and its Contrary Existence

অত্যাধিক যৌন উত্তেজনা ও উন্মাদনা মানবসমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা! ~মহর্ষি মহামানস

ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান