প্রসঙ্গ: সময়

প্রসঙ্গ: সময়
~সুমেরু রায়

কোনকিছুর গতি বা সক্রিয়তা থেকেই 'সময়' নামে একটি ভার্চুয়াল অস্তিত্বের সৃষ্টি হয়। মহাজাগতিক সময়ের জন্ম হয়েছে, মহাবিস্ফোরণের ( Big Bang) মধ্য দিয়ে মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার সাথে সাথেই।

প্রত‍্যেকটি গতিশীল বা সক্রিয় বস্তুর নিজস্ব সময় আছে। আমরা পৃথিবীর সময়ের অধীনে হলেও, আমাদের প্রত‍্যেকেরই আছে নিজস্ব সময়। একজনের সক্রিয়তার উপরেই তার নিজস্ব সময় সৃষ্টি হয়।

সময় হলো~ কোনো দুটি ঘটনার (অথবা কোনো ধারাবাহিক ঘটনার দুটি ভিন্ন ভিন্ন অবস্থার) মধ্যবর্তী দূরত্ব বা ব্যবধান। যা আমরা নির্দিষ্ট গতিতে নিয়মিতভাবে সংঘটিত কোন ঘটনা হতে উদ্ভূত পরিমাপবোধক সময় নামক এক ভার্চুয়াল অস্তিত্বের ভিত্তিতে উপলব্ধি করে থাকি। যেমন, পৃথিবীর নিয়মিত আবর্তন থেকে উৎপন্ন হওয়া সময়ের ভিত্তিতে আমরা কোনো ঘটনার সময় নির্ধারণ করে থাকি।

সময় কি শুধুই মানুষের মনোগত বা ধারণাগত একটা অস্তিত্ব, নাকি তার বাস্তবতা-ও আছে! কেউ উপলব্ধি করুক আর নাই করুক, সময় তার নিজস্ব অস্তিত্বে বিরাজমান। বরং কখনো কখনো সময় সম্পর্কে মানুষের ধারণা ভ্রান্ত হতে পারে। কখনো অল্প সময়কে কারোকাছে অনেক সময় বলে মনে হতে পারে। আবার তার বিপরীতও হতে পারে।
যেমন কোনো চক্র খুব দ্রুত বেগে ঘুরতে থাকলে, কোনো দর্শকের মনে হতে পারে, চক্রটি ধীরগতিতে ঘুরছে, এবং/অথবা বিপরীত দিকে ঘুরছে। এটা হলো দর্শকের দৃষ্টি বিভ্রম বা তার ভ্রান্ত ধারণা। বাস্তব তা নয়।

কোন বস্তু বা কোনকিছু মন্থর অথবা দ্রুতগতিসম্পন্ন হলে, তার কোন একটি (ঘটনার) অবস্থান থেকে অপর একটি (ঘটনার) অবস্থানে পৌঁছাতে (নিয়মিত গতিশীল অপর একটি ঘটনা থেকে উৎপন্ন পরিমাপযোগ্য সময়ের ভিত্তিতে দীর্ঘ সময় অথবা অল্প সময় ব্যয় হতে পারে।

ওই গতিশীল বস্তুটির নিজস্ব সময় কিন্তু তার ঐ গতির উপরেই নির্ভরশীল। সেখানে, তার গতি মন্থর হলে, তার সময়ও মন্থর হবে। তার গতি দ্রুত হলে, তার সময়ও দ্রুত হবে। এর ব্যতিক্রম বা বিপরীত হবে না। অর্থাৎ তার গতি দ্রুত হলে, তার সময় মন্থর হয়ে যাবেনা।

আপেক্ষিকতা দুই প্রকারের। প্রথমটি হলো, একাধিক বিষয়বস্তুর মধ্যে তুলনামূলক বিচার। আর দ্বিতীয়টি হলো, কোনকিছুর ভিন্ন ভিন্ন অবস্থায়, তার নিজের সঙ্গে নিজের তুলনামূলক বিচার।

আমি এখানে যে আপেক্ষিকতার উল্লেখ করছি, তা হলো কোনকিছুর নিজের সঙ্গে নিজের আপেক্ষিকতা। এখানে উচ্চ গতিশীল কোনকিছুর সঙ্গে তারই অপেক্ষাকৃত নিম্ন গতিসম্পন্ন অবস্থার সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে।

কোনকিছুর সময় মন্থর হওয়ার অর্থ তার আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পাওয়া। সাধারণত, কারও গতি যদি আগের চেয়ে বেশি বা দ্রুত হয়, তবে তার সময়ের গতিও আগের চাইতে আরও দ্রুত হবে। এবং ফলস্বরূপ, তার আয়ু হ্রাস পাবে। বস্তুর গতি বা সক্রিয়তা বৃদ্ধি পেলে, বেশি ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ার কারণে তার আয়ুষ্কাল কমে যাবে।

তবে আইনস্টাইনের মতে, কোনও কিছু যদি আগের চাইতে দ্রুতবেগে অগ্রসর হয়, তবে তার সময় হ্রাস পাবে এবং তার আয়ু বৃদ্ধি পাবে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তার নিজের গতি হ্রাস না হলে, কী করে তার (নিজস্ব) সময় মন্থর হয়ে যায়!

কোন বস্তু বা কোনকিছু মন্থর অথবা দ্রুতগতিসম্পন্ন হলে, তার কোন একটি (ঘটনার) অবস্থা থেকে অপর একটি (ঘটনার) অবস্থায় পৌঁছাতে (নিয়মিত গতিশীল অপর একটি ঘটনা থেকে উৎপন্ন পরিমাপযোগ্য সময়ের ভিত্তিতে) দীর্ঘ সময় অথবা অল্প সময় ব্যয় হতে পারে।

ওই গতিশীল বস্তুটির নিজস্ব সময় কিন্তু তার ঐ গতির উপরেই নির্ভরশীল। সেখানে, তার গতি মন্থর হলে, তার সময়ও মন্থর হবে। তার গতি দ্রুত হলে, তার সময়ও দ্রুত হবে। এর ব্যতিক্রম বা বিপরীত হবে না। অর্থাৎ তার গতি দ্রুত হলে, তার সময় মন্থর হয়ে যাবেনা।

কোন গতিশীল বস্তুর উপর বাইরের কোনোরূপ বল বা শক্তি প্রযুক্ত না হলে, বস্তুর গতি হতে উৎপন্ন 'সময়' স্বাভাবিকই থাকবে। তার সময় মন্থর হয়ে যাবে না।

কোন বস্তু যদি মহাশূন্য পথে (যদিও প্রকৃতপক্ষে শূন্য নয়) গতিশীল থাকে, সেক্ষেত্রে তার ক্ষয়ক্ষতি কম হবে অথবা হবেনা। তার আয়ু প্রায় একই থাকবে, অথবা তার আয়ু তেমন কমবে না। এটাই সাধারণ ধারণা।

কিন্তু বস্তুটী খুব দ্রুতগতি সম্পন্ন হলে, তার আকর্ষণ ক্ষমতা বেশি হবে, তার 'গ্র‍্যাভিটি' বেশি হবে। তারফলে, প্রচুর মহাজাগতিক কণা তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়বে। আর তাতে তার গতি বাধাপ্রাপ্ত হবে এবং তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটবে।

সেই উচ্চগতি সম্পন্ন বস্তুটি ক্রমশই মহাজাগতিক কণায় ভরে উঠতে থাকবে। অর্থাৎ তার মধ্যে মহাজাগতিক কণার পরিমাণ বৃদ্ধি পেতে থাকবে, এবং বস্তুটির স্বাভাবিক অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে থাকবে ক্রমশই।

এর ফলে ক্রমশই সেই বস্তুটীর আয়ুষ্কাল কমতে থাকবে। আর আয়ুষ্কাল যত কমতে থাকবে, তার সময় ততই দ্রুততর হবে। দ্রুত ফুরিয়ে আসবে তার সময়।

প্রচলিত তত্ত্ব অনুযায়ী, কোনকিছুর গ্র‍্যাভিটি যত বেশি হবে, তার সময় ততই মন্থর হতে থাকবে। কিন্তু সেই বস্তুটির মধ্যে যদি আত্মরক্ষার ব‍্যবস্থা না থাকে, যদি সে মহাজাগতিক এনার্জি বা কণা থেকে নিজেকে রক্ষা করতে না পারে, সেক্ষেত্রে তার আয়ুষ্কাল কমে যাবে। আর আয়ুষ্কাল কমে যাওয়ার অর্থই হলো, তার (নিজস্ব) 'সময়' দ্রুতগতি সম্পন্ন হওয়া।

এই প্রসঙ্গে বলি, উচ্চতম গতিশীল আলোর ক্ষেত্রেও তার 'সময়' সৃষ্টি হয়ে থাকে। বহু দূরের গ‍্যালাক্সী থেকে পৃথিবীতে আসতে, আলোর অনেক সময় লাগে। তাই বলে, উচ্চতম গতির কারণে তার 'সময়' মন্থর হয়েছে, এমন কথা বলা যায়না।

আলো কোনও কালো বস্তুর উপর পতিত হলে, সে তার আলোক অস্তিত্ব হারাবে। এছাড়া, কোনো ঘরের সমস্ত দেওয়ালে আয়না বসানো থাকলেও, ঐ ঘরটি ইলেকট্রিক বাল্ব জ্বালিয়ে আলোকিত করার পরে, যখন বাল্বটির সুইচ অফ করে, আলো নিভিয়ে দেওয়া হবে, তখন ঐ ঘরে আর আলোর অস্তিত্ব থাকবে না।

মহাবিশ্ব সৃষ্টি হওয়ার মূহূর্তেই টাইম, স্পেস এবং ডেসটিনি একইসঙ্গে সৃষ্টি হয়েছে মহা বিস্ফোরণের মধ্য দিয়ে।
এই ভার্চুয়াল অস্তিত্ব গুলি একে অপরের উপর নির্ভরশীল হলেও এবং একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে থাকলেও এদের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব রয়েছে।

সবশেষে বলি, 'সময়' নামে ভার্চুয়াল সত্তাটি মহাবিশ্ব সৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গেই অস্তিত্ব সম্পন্ন হয়েছে। মহাবিশ্ব লয় প্রাপ্ত হলেই, 'সময়' অস্তিত্বেরও বিনাশ ঘটবে তখন।



Comments

Popular posts from this blog

S-Existence and its Contrary Existence

অত্যাধিক যৌন উত্তেজনা ও উন্মাদনা মানবসমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা! ~মহর্ষি মহামানস

ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান