হতাশা এবং তজ্জনিত মনোবিকার এক বড় সমস্যা

হতাশা এবং তজ্জনিত মনোবিকার এক বড় সমস্যা।
~মহর্ষি মহামানস



আমরা সবাই জানি, হতাশা থেকে সৃষ্ট মনঃকষ্ট ---বিষন্নতা ---অবসাদ হতে বহু অঘটন--- অসুস্থতা, বহু সমস্যা জন্ম নিয়ে থাকে।

হতাশা হলো, কোনকিছুর জন্য আশা বা প্রত‍্যাশা মতো প্রাপ্তি না ঘটার ফলে, মনের একপ্রকার আহত বা আঘাতপ্রাপ্ত অবস্থা।

হতাশার পিছনে থাকে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা বা প্রত‍্যাশা। আর অপরদিকে থাকে অসাফল‍্য--- অপ্রাপ্তি, চাহিদামতো ঘটনা না ঘটা।

বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন প্রকার শারীরিক ও মানসিক গঠন, জ্ঞান ও চেতনস্তর এবং প্রয়োজন বা চাহিদা অনুযায়ী পরিবেশ-পরিস্থিতি সাপেক্ষে বিভিন্ন ধরণের আশা-আকাঙ্ক্ষা সৃষ্টি হয়ে থাকে।

আমরা জানি, এই প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, লাভ-লোকসান, অভাব, ঘটন-অঘটন, ইচ্ছা-অনিচ্ছা, চাহিদা প্রভৃতি সবকিছুই জাগতিক ব‍্যবস্থা অনুযায়ী যখন যেটা ঘটার সেটাই ঘটে থাকে ('ভাগ্য আসলে কী' প্রবন্ধ দ্রষ্টব্য)। কিন্তু তা' জানা সত্বেও, আমরা অসহায়। জাগতিক নিয়মেই আমাদেরকে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিষয়-বস্তু লাভের জন্য আশা করতে হয়, এবং বহু ক্ষেত্রেই ঘটনাক্রমে হতাশ হতে হয়, হতাশা জনিত দুঃখ-কষ্ট ভোগ করতে হয় আমাদের।

অনেক মানুষকেই দেখাযাবে, সারাজীবন ধরে একেরপর এক বারবার অসফল--- অভাবগ্রস্ত হয়েও, নিদারুণভাবে দুর্ভাগ‍্যের শিকার হয়েও, সাময়িকভাবে আশাহত হলেও, হতাশায় ভেঙে পড়েনি। অনতিবিলম্বে বিফলতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, সমস্ত হতাশা ঝেড়ে ফেলে, নতুন উদ‍্যোমে পুণরায় লড়াইয়ের জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে। 

আবার, অনেককেই দেখাযাবে, অল্পতেই, ছোটখাটো ব‍্যাপারেই আশাহত হয়ে সাংঘাতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। এমনকি ধ্বংসাত্মক পথ বেছে নিয়েছে অথবা বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। এসব অনেকটাই নির্ভর করে ব‍্যক্তির শরীর ও মনের অবস্থার উপর, এবং বাকিটুকু নির্ভর করে তার পরিবেশ-পরিস্থিতির উপর। 

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে কী মনকে শিক্ষিত করে তুললে, অথবা মন শিক্ষিত হলে, এই দুরবস্থা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হবে? 

হ‍্যাঁ, অনেকসময় অনেকটাই সম্ভব হবে, যদি সেই মন শিক্ষিত এবং সেইসঙ্গে স্বনিয়ন্ত্রনাধীন হয়ে থাকে। শিক্ষার মধ্যে একটি প্রধান বিষয় হলো মানসিক প্রস্তুতি। মনে রাখতে হবে, যেকোনো সময় বাধা-বিঘ্ন অসাফল‍্য দুঃসময় আসতেই পারে। তারজন্য সর্বদা নিজেকে প্রস্তুত রাখতে হবে। সহনশীলতা বাড়িয়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র তত্ত্বগত ভাবে শিক্ষিত হলেই হবেনা। ব‍্যবহারিক বা প্রয়োগগত শিক্ষা ও অনুশীলনও থাকা দরকার। এই জগতের বন্ধুর পথে এগিয়ে চলতে গেলে, যেমন সমাজ-সংসার সম্পর্কে বাস্তব জ্ঞান থাকা প্রয়োজন, তেমনি মন সম্পর্কেও ভালো জ্ঞান থাকা আবশ্যক।

তবে শুধু জ্ঞান ও শিক্ষার দ্বারাই সবসময় সবক্ষেত্রে সমস্যা মুক্ত হওয়া সম্ভব নাও হতে পারে। এমন কিছু কিছু ক্ষেত্র আছে, যখন এই আশা এবং তৎপরবর্তী হতাশা থেকে বেড়িয়ে আসা সম্ভব হয়ে ওঠেনা। যেমন, দুর্ভাগ‍্যক্রমে যদি কারো নূন্যতম চাহিদাটুকুও না মেটে, বারবার সে যদি তার মৌলিক প্রয়োজন মেটাতে অসফল হয়, তখন সেই ব‍্যক্তির পক্ষে হতাশ হওয়া এবং সেই হতাশার কারণে অসুস্থ হওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় থাকেনা। তখন কোনো জ্ঞান, কোনো শিক্ষাই কার্যকর হয়না। 

তখন একমাত্র মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসা ছাড়া, এবং সেই হতাশার বাস্তব কারণ অপসারণ করা ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকেনা। হতাশ হয়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ার পিছনে আভ‍্যন্তরীন দিক থেকে যে শুধুমাত্র ব‍্যক্তির মনই দায়ী তা' নয়। শরীরের বিভিন্ন অন্তঃক্ষরা গ্রন্থিসহ বিভিন্ন দেহযন্ত্র বা অরগান-ও এর পিছনে অনেকসময় অনেকাংশে দায়ী থাকে। 

এক্ষেত্রে, প্রথমে যথাসম্ভব নিরপেক্ষ অবস্থান থেকে বিচার-বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে অতীতের ভুল-ত্রুটি সংশোধন করে, অতীত থেকে শিক্ষা অভিজ্ঞতা লাভ করতে হবে। এর দ্বারা ক্ষতির থেকে বেশি লাভবান হওয়ার কথা ভেবে, খুশি হতে হবে। তারপর, কোনো কঠোর কায়িক পরিশ্রমের মধ্যে নিজেকে নিযুক্ত রেখে মানসিক দুশ্চিন্তা থেকে অনেকটা মুক্ত রাখতে হবে। তারসঙ্গে নিয়মিতভাবে আত্ম-ধ‍্যান, প্রাণযোগ, সুষুপ্তি যোগ প্রভৃতি বিশেষ কিছু যোগ প্রক্রিয়ার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে সুসম আহার-বিহারসহ, সূক্ষ্ম মাত্রায় সুনির্বাচিত হোমিওপ্যাথিক ওষুধের সাহায্য নিতে হবে। তাহলেই দুরবস্থা থেকে বেড়িয়ে এসে, নতুন করে আবার জীবন-চলা শুরু করা সম্ভব হবে।  প্রয়োজনে সমস্ত দিক বিচার বিবেচনা করে, ভালো সময়ের জন্য অপেক্ষা করতে হতে পারে। কারণ সাফল্য লাভের ক্ষেত্রে সময় একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। 

প্রসঙ্গত, একটা অতি সরল সমাধান আমাদের সমাজে কথিত আছে, "কাজ করে যাও, ফলের আশা করোনা"। এটা যে কতখানি অবাস্তব কথা, তা' বিজ্ঞজন মাত্রই অবগত আছেন।

Comments

Popular posts from this blog

S-Existence and its Contrary Existence

অত্যাধিক যৌন উত্তেজনা ও উন্মাদনা মানবসমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা! ~মহর্ষি মহামানস

ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান