বিজ্ঞানকে কী নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়?

বিজ্ঞানকে কী নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়?



বহকাল ধরেই একশ্রেণীর অত্যন্ত লোভী ব‍্যবসায়ীদের চক্রান্তের শিকার হয়েছে আমাদের প্রিয় ও শ্রদ্ধেয় "বিজ্ঞান"! বিশেষত, একশ্রেণীর ওষুধ ব‍্যবসায়ীদের দ্বারা 'বিজ্ঞান' হয়েছে অতীব  দূষিত ও কলঙ্কিত। এই ওষুধ ব‍্যবসার একাংশ দিনের পর দিন আমাদেরকে প্রতারিত করে চলছে। 

তারপরে রয়েছে, যুদ্ধাস্ত্র ব‍্যবসায়ীগণ। বিজ্ঞানকে তারা তাদের অতি হীন সংকীর্ণ স্বার্থের দাসে পরিণত করেছে। মানুষ অসহায়ের মতো প্রতিনিয়ত নিপীড়িত অত‍্যাচারীত হয়ে চলছে এদের দ্বারা। 

ইনফরমেশন ও ডিজিটাল টেকনোলজির ক্ষেত্রেও বিজ্ঞানের চুড়ান্ত অপব্যবহার হয়ে চলেছে। আপনারা বলবেন, এরজন্য তো বিজ্ঞান দায়ী নয়!

সংক্ষেপে 'বিজ্ঞান' হলো একটা নিয়মমাফিক পদ্ধতিগত ব‍্যবস্থা বা সিস্টেমের মধ্য দিয়ে তত্ত্ব ও তথ্য যাচাই করা, বিচার বিশ্লেষণ ও গবেষণা করা, এবং সেই গবেষণা লব্ধ জ্ঞান ও ফলকেও অনেকে বিজ্ঞান বলে থাকে। 

এখন এই বিজ্ঞান নামক সিস্টেম ও নলেজকে মানুষ যেভাবে ব‍্যবহার করবে সে সেইরকম ফল প্রসব করবে! বিজ্ঞান কোনো বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের বিষয়ই নয়। তার উপর বিশ্বাস করার অর্থ হলো, তাকে নিয়ে যে সমস্ত মানুষ কাজ করছে, তাদের উপর বিশ্বাস করা। এখন কথা হচ্ছে, সেই সমস্ত মানুষদের কি নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা যায়!?  যায় না। 

ধর্ম, বিজ্ঞান ও রাজনীতির ক্ষেত্রে থাকা অনেক মানুষই আসলে খুব সাধারণ মানুষ, যে বিচারপতির একটা রায়ে অনেককিছু ওলটপালট হয়ে যেতে পারে, সেও আদপে একজন সাধারণ মানুষ। সেও হতে পারে একজন ধর্মান্ধ, কুসংস্কারে আচ্ছন্ন অন্ধবিশ্বাসী মানুষ। 

বিজ্ঞানীদের মধ্যে ভালো-মন্দ সব রকম মানুষই আছেন। সেখানে লোভ-মোহ, অন্ধবিশ্বাস, রাজনীতি, ব‍্যবসা, লবি, হিংসা-বিদ্বেষ, সৎ-অসৎ আছে। আছে অনেক ষড়যন্ত্রের শিকার, এবং ষড়যন্ত্রকারী। 

তাই, বিজ্ঞানীরা যাই করুক বা যাই বলুক না কেন, তা' বিজ্ঞানের নামে বিচার-বিবেচনা না করে, ভালো করে তলিয়ে না বুঝে, অন্ধের মতো বিশ্বাস করাটা হলো অন্ধবিশ্বাস। বিজ্ঞানীরা সর্বদাই ঠিক বা সত্যি বলবেন, এই মিথ্যা ধারণা পোষণ করাও অন্ধবিশ্বাস। ধর্মগ্রন্থ ও ধর্মগুরুদের কথায় অন্ধের মতো বিশ্বাস করার ক্ষেত্রে যেমন বলা হয়ে থাকে, এক্ষেত্রেও তেমনি। অন্ধবিশ্বাস হলো, দৃঢ় অবিচল বিশ্বাস। যাকে কোনো যুক্তি দিয়েই টলাতে পারা যায়না।

তাই, বিজ্ঞান মানেই সত্য ও পরীক্ষিত। বিজ্ঞানকে নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করা চলে, এই অন্ধ ধারণা থেকে এখনো মুক্ত হোন। মানুষকে সজাগ হতে বলছি। গভীরভাবে বিচার বিবেচনা করে, ভালভাবে যাচাই করে তবেই বিজ্ঞানের ফল গ্রহণ করতে হবে। 


অন্ধবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের সবকিছু মেনে নিলে, নির্বিচারে বিজ্ঞানের সুফল ও কুফল না বুঝে, বিজ্ঞানের দান গ্রহণ করলে, ভয়ানক পস্তাতে হবে অবশেষে। তখন আর আফশোষ করারও সময় থাকবে না। একথা শুধুমাত্র বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেই নয়, ধর্ম, রাজনীতি এবং অন‍্যান‍্য ক্ষেত্রেও একই ভাবে প্রযোজ্য। সামনে খুব কঠিন সময় আসছে, তাই সর্বদা সজাগ সতর্ক থাকতে হবে আমাদের। 

আমি জানি, ধর্মের মতোই বিজ্ঞানের অজ্ঞান অন্ধভক্ত অন্ধবিশ্বাসীদের পক্ষে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সহ‍্য করা একটু কঠিন-ই হবে।

Comments

Popular posts from this blog

S-Existence and its Contrary Existence

অত্যাধিক যৌন উত্তেজনা ও উন্মাদনা মানবসমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা! ~মহর্ষি মহামানস

ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান