সুখী হওয়ার মূল মন্ত্র ● মহর্ষি মহামানস

 সুখী হওয়ার মূল মন্ত্র ● মহর্ষি মহামানস



সুখী হয় আমাদের মন। মনের মধ্যে সুখের এক প্রকার ভাব-তরঙ্গ প্রবাহিত হতে থাকলে, আমরা সুখ বোধ করে থাকি। 

 এই সুখ বোধ করার পিছনে সাধারণত কোনো না কোনো বাস্তব কারণ থাকে। কাঙ্খিত কোনো কিছুর প্রাপ্তি অথবা কোনো অভাব পুরণের মাধ্যমে আমরা সুখী হই। এছাড়াও অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো কিছুর বিয়োগের ফলেও সুখ বোধ হতে পারে। আবার অনেক সময় বাস্তব কারণ ছাড়াও কাল্পনিক কোনো বিষয়-বস্তুর মাধ্যমে অথবা আপাত দৃষ্টিতে কোনো কারণ ছাড়াও মনের মধ্যে সুখের ভাব তরঙ্গ প্রবাহিত হতে পারে। 

 তবে কোনো সুখই বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়না। সুখের ভাব-তরঙ্গ অচিরেই উধাও হয়ে যায়।

 

বিপরীত দিক থেকে, দেখা যাবে, অনেকে স্বল্প কারণেই অথবা আপাত দৃষ্টিতে অকারণেই অসুখী বোধ করছেন। কারো কারো ক্ষেত্রে কাল্পনিক কারণেই তাদের মনের মধ্যে অসুখের ভাব-তরঙ্গ প্রবাহিত হয়ে চলেছে। মানসিক বা শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেকেই অসুখী হয়ে থাকেন। সেক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থতা লাভ করতে হবে। অসুখী ভাব কিন্তু সুখী ভাবের চাইতে অনেক বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়ে থাকে। তবে কারণে, অকারণে বা স্বল্প কারণে অসন্তুষ্ট হওয়ার ফলে অসুখী হওয়ার ঘটনাই বেশি। অসন্তোষ আর অসুখ প্রায় সমার্থক। 


অসন্তোষের অনেক কারণ থাকে। তার মধ্যে প্রধান দুটি কারণ হলো, চাহিদা অনুযায়ী প্রাপ্তি না ঘটা, এবং মোটেও কাম‍্য নয় এমন কিছুর প্রাপ্তি ঘটা। অসন্তোষেরও বিশেষ ভাব-তরঙ্গ আছে, যা মনের মধ্যে প্রবাহিত হতে থাকলে, আমরা অসন্তোষ বোধ করে থাকি। মনটাকে যদি তুমি একটি উন্নত সফটওয়্যার রূপে কল্পনা করতে পারো, এবং মনের উপর নজর রাখা অভ‍্যাস করতে পারো, তাহলেই তুমি বহু মানসিক সমস্যার সমাধান করতে পারবে নিজে নিজেই। মনের প্রতি ধ‍্যান দিলেই দেখবে, মনের মধ্যে চলতে থাকা যেকোনো ধরনের ভাব-তরঙ্গ নিমেষে উধাও হয়ে যাবে। 


আমি তোমাকে কৃত্রিম সুখ লাভের কথা বলবো না। বাস্তবেই সুখী হওয়ার অনেক সুযোগ রয়েছে। কিন্তু জীবন-কলা না জানার ফলে, আমরা সে পথে না হেঁটে, সেগুলোকে উপেক্ষা করে থাকি এবং দুঃখকে ডেকে আনি।


সুখী হওয়ার প্রচলিত ধারার সীমাবদ্ধ গন্ডিতে  আমরা এতটাই আবদ্ধ ও অভ‍্যস্ত হয়ে পড়েছি যে আমাদের সুখী হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম বা সীমিত হয়ে পড়েছে। এর বাইরেও যে সুখী হওয়ার অনেক ক্ষেত্র ও সুযোগ রয়েছে, সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই অন্ধকারে আছি। আসলে, আমরা সুখী হতে চাইলেও, আমাদের চিন্তা-ভাবনা, কাজকর্ম গতিবিধি সুখের পরিবর্তে অসুখকেই ডেকে আনে। 


সুখী হওয়ার সদিচ্ছা বা ঐকান্তিক চাহিদা থাকলে প্রচলিত ধারার বাইরেও অনেকভাবে সুখী হওয়া যায়। যেমন, জ্ঞান-অভিজ্ঞতা লাভে সুখী হওয়ার অভ‍্যাস করতে পারো। নিজেকে জানার মাধ্যমে, নিজের বিকাশ ঘটানোর মাধ্যমে, অথবা নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষেত্রে সফল হওয়ার মাধ্যমে তুমি সুখী হতে পারো। সবসময় শুধু বড় বড় সাফল্যের দিকে না তাকিয়ে প্রতিদিনের ছোট ছোট অজস্র সাফল্য লাভের মাধ্যমে তুমি অতি সহজেই সুখী হতে পারো। 


অসংখ্য প্রতিকুলতার মধ্য দিয়ে তুমি যে এখনো বেঁচে আছো এবং এতো বাধা-বিঘ্ন পেরিয়েও তুমি যে এপর্যন্ত এগিয়ে আসতে পেরেছো, এটাই তো বিরাট সাফল্য। এই সাফল্যগুলোকে উপলব্ধি করতে না পারাই দুঃখজনক। সারাদিনে কতো সাফল্যের মধ্য দিয়ে তুমি এগিয়ে চলেছো, কিন্তু সেগুলোর দিকে তুমি নজর না দিয়ে কোথাও একবার অসফল হলে, আর সেটাকেই আঁকড়ে ধরে তুমি অসুখী হচ্ছো! হিসেব করলে দেখতে পারবে, তোমার জীবনে অসাফল‍্যের চাইতে সাফল্যের পরিমাণ অনেক অনেক বেশি।


একটু খেয়াল করে দেখো, প্রতিদিন তুমি কতকিছু আবিষ্কার করছো, কতকিছু সৃষ্টি করছো, কতো আইডিয়া, কতো কৌশল উদ্ভাবন করে চলেছো! কতো শিল্প রচনা করে চলেছো। গুছিয়ে সুন্দরভাবে কথা বলতে পারা এবং সুন্দরভাবে নিজেকে উপস্থাপিত করতে পারাও একটা শিল্প। একটু সজাগ থাকলেই নিজেকে নব নব রূপে আবিষ্কার করতে পারবে তুমি, এগুলো কি কম সুখকর! কিন্তু তুমি এতো শত সুখ থেকে নিজেকে বঞ্চিত করছো শুধুমাত্র সজাগ সচেতনতার অভাবে। এবার তুমি সজাগ সচেতন হতে পেরে সুখী হও। 


মানুষকে সাহায্য করতে পেরে সুখী হও। নিঃস্বার্থভাবে কাউকে সুখী করার মাধ্যমে সুখী হও। মানুষকে ভালবাসতে পেরে সুখী হও। দেশের জন্য কিছু করতে পেরে এবং দেশকে ভালো বাসতে পেরে সুখী হও। শিশুর মুখে হাসি ফোটাতে পেরে, অসুখীর মুখে হাসি ফোটাতে পেরে সুখী হও। নিজের মনোবিকাশ ঘটাতে পেরে সুখী হও। কেউ তোমাকে অপমান করেছে, তুমি সেই অপমানকে গ্রহণ না করে, উপেক্ষা করতে পেরে সুখী হও। কেউ তোমার কোনো ক্ষতি করেছে, তাকে ক্ষমা করতে পেরে সুখী হও। ভোগ করতে পেরে সুখী হও। ত‍্যাগ করতে পেরে সুখী হও। এবং প্রতিটি ক্ষেত্রেই মনেমনে বলো আমি সুখী হলাম। দেখবে, সঙ্গে সঙ্গে তোমার মন ধনাত্মক বা পজিটিভ হয়ে উঠবে।


তোমার চারিপাশে অজস্র সুখের উৎস রয়েছে, সচেতন ও আত্মসচেতন থেকে, নিত্য নতুন সুখের উৎস খুঁজে বের করতে পেরে তুমি সুখী হবে। এরপর তুমি নিজেই সুখের অনেক ঊৎস খুঁজে বের করতে পারবে এবং তার ফলে ক্রমশই তোমার সুখের পরিমাণ ক্রমশই বৃদ্ধি পেতে থাকবে। এগিয়ে যাও, আমার শুভেচ্ছা তোমার সঙ্গে থাকবে। 



Comments

Popular posts from this blog

S-Existence and its Contrary Existence

অত্যাধিক যৌন উত্তেজনা ও উন্মাদনা মানবসমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা! ~মহর্ষি মহামানস

ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান