ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান

 


ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান

~মহর্ষি মহামানস (সুমেরু রে)


অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ষণ সংঘটিত হওয়ার পিছনে প্রধান কারণ হলো~ ধর্ষকামী (অজ্ঞান-অসুস্থ-বিকারগ্রস্ত) ব‍্যক্তির শরীর ও মনের মধ্যেকার নিয়ন্ত্রণ-অযোগ্য অত‍্যাধিক কামোত্তেজনা। 

কোনো সাধারণ শিক্ষা~ আইন বা শাসন-ই এই অস্বাভাবিক কামোত্তেজনাকে নিয়ন্ত্রণ বা দমন করতে সক্ষম নয়। একমাত্র উপযুক্ত চিকিৎসাই পারে এর প্রশমন ঘটাতে। তারপরে প্রয়োজন হয় মনোবিকাশের শিক্ষা। 

অসুস্থ কামোত্তেজনা এর আপাত কারণ হলেও, এই অসুস্থতার পিছনে রয়েছে আরো অনেক সংঘটক। তাই শুধু কামোত্তেজনার চিকিৎসা করলেই হবেনা, এর পিছনে যেসব উৎপাদক বিষয়গুলো রয়েছে তাদের জন্যেও ব‍্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। নাহলে, সমস্যা থেকেই যাবে। 

অসুস্থ অস্বাভাবিক কামোত্তেজনা ঘটানোর জন্য দায়ী মূল কারণগুলো কি কি এবার দেখতে হবে আমাদের।

প্রথমেই যেটা উল্লেখযোগ্য তা হলো, বংশগত দোষ বা কারণ। পরবর্তীতে যেসমস্ত আচরণগত দোষ-ত্রুটিগুলো উল্লেখ করেছি, সেগুলোই পূর্বপুরুষদের ক্ষেত্রে ঘটে থাকলে, তার কুফল উত্তর পুরুষের মধ্যে সংক্রামিত হবে, এবং সেই কুফল উত্তর পুরুষদেরও ভোগ করতে হবে। আমাদের অনেক অসুস্থতার পিছনেই রয়েছে পূর্বপুরুষদের দোষ-ত্রুটি, অপরাধ এবং তাদের অর্জিত অসুস্থতা।

অজ্ঞান বাবা-মা তাদের সন্তানদেরকে কিছু দিতে পারুক আর  নাই পারুক, বংশানুক্রমিক রোগ-ব‍্যাধি এবং কিছু কিছু আচরণগত ত্রুটি অবশ্যই দিয়ে থাকে। 

এবার বর্তমানে সংঘটিত দোষ-ত্রুটি, অপরাধ ও অসুস্থতা সম্পর্কে কিছু কথা বলি~ অজ্ঞানতা, চেতনার স্বল্পতা, সুশিক্ষার অভাব, এবং এরফলে দূষিত সংসর্গে এসে নানা কঠিন রোগে আক্রান্ত হওয়া। গনোরিয়া, সিফিলিস এবং বিভিন্ন রোগ ও চর্মরোগের অপচিকিৎসা এবং তার ফলে রোগ-ব‍্যাধির অবদমন। অনুচিত-অস্বাস্থ্যকর খাদ্য ও পানীয় গ্রহণ, অনিয়ম, অনাচার, অত‍্যাচার, শরীর ও মনের দূষণ ঘটানো কর্ম। স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলা। অশুভকর ও অস্বাস্থ্যকর দ্রব্যের ব‍্যবহার। অজ্ঞানতা অন্ধত্বের কারণে এবং ধর্মীয় কুশিক্ষার প্রভাবে জীবন বিরোধী অস্বাভাবিক আচরণ বা কর্ম করা।  অন্ধবিশ্বাসে নানারকম অকর্ম-কুকর্মে জড়িয়ে পড়া। এরসাথে রয়েছে অজ্ঞান-অশিক্ষিত ও অসুস্থ পারিবারিক ও সামাজিক পরিবেশ। এছাড়াও রয়েছে, অজ্ঞানতা জনিত ক্ষমতার দম্ভ এবং বিভিন্ন বিপনন সংস্থা কর্তৃক কামভাবকে উসকে দেওয়া বিজ্ঞাপন। আর এই আগুনে ঘৃতাহুতি দেওয়ার জন্য রয়েছে রাজনৈতিক ও ধর্মীয় হিংসা-বিদ্বেষ উন্মাদনা।

দীর্ঘকাল ধরে বংশপরম্পরায় এইভাবে চলতে চলতে এখন প্রায় কেউই আর সুস্থ নেই। তারমধ্যে কারো কারো শরীর-মন অতিমাত্রায় অসুস্থ-বিকারগ্রস্ত। সেই কঠিন ও জটিল অসুস্থতার অন‍্যতম একটি লক্ষণ হলো অত‍্যাধিক অস্বাভাবিক কামোত্তেজনা এবং তার ফলস্বরূপ চারিদিকে ঘটে চলছে একের পর এক ধর্ষণ এবং ভয়াবহ নিষ্ঠুরতার ঘটনা।

এই প্রসঙ্গে ধর্ষণ ছাড়াও আরেকটি বড় সমস্যার কথা বলতেই হয়, যা আজপর্যন্ত সরকার বা বুদ্ধিজীবী অথবা শিক্ষা বা চিকিৎসা ব‍্যবস্থা কেউই গুরুত্ব দিয়ে এর প্রতিকারে এগিয়ে আসেনি। অথচ এর জন্য মানবসমাজের প্রভূত ক্ষতি সাধন হয়ে চলেছে প্রতিদিন। অত‍্যাধিক কামোত্তেজনার ফলে বহু মানুষ হস্তমৈথুনের শিকার। অতিরিক্ত  হস্তমৈথুনের ফলে মানুষের শরীর ও মনের সাংঘাতিক পরিমাণে ক্ষয়ক্ষতি ঘটে থাকে। মানসিক বিকার-বিকৃতি ঘটে থাকে। বিশেষত নতুন প্রজন্ম প্রায় নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে এই অতি কামোত্তেজনার কারণে।

এর একমাত্র প্রতিকার: যদি অধিকাংশ মানুষ তাদের অজ্ঞানতা-অন্ধত্ব মোচনের উদ্দেশ্যে, সজাগ-সচেতন~ সক্রিয়ভাবে দিকে দিকে মানবধর্ম~ 'মহাধর্ম' গ্রহণ ও অনুশীলনের মধ‍্য দিয়ে আত্মবিকাশ লাভে উদ‍্যোগী হয়ে ওঠে, তবেই ক্রমশ এর প্রতিকার সম্ভব হবে। যুগসন্ধিকালের এই কঠিন পরিস্থিতিতে মানবধর্ম~ 'মহাধর্ম'-ই একমাত্র মুক্তির উপায়।

ধর্ষক ও সম্ভাব্য ধর্ষকদের জন্য আমাদের কাছে শিক্ষাসহ চিকিৎসা ব‍্যবস্থা আছে। তবে আমাদের 'মহামনন' মনোবিকাশের শিক্ষাক্রম শুধু এদের জন্যেই শিক্ষা ও চিকিৎসা ব‍্যবস্থা নয়। প্রত‍্যেক ছেলে-মেয়ে, মা-বাবাকে এই শিক্ষা (প্রয়োজনে চিকিৎসাও) গ্রহণ করতে হবে। তবেই সমাধান সম্ভব হবে। 

এখন প্রশ্ন হলো, সম্ভাব্য ধর্ষক কারা হতে পারে! ধর্ষকামীতা অনেক মানুষের মধ্যেই সুপ্তাবস্থায় থাকে। শুধু পুরুষের মধ্যেই নয়, নারীদের মধ্যেও থাকতে পারে। 

এখন, লক্ষ্য করতে হবে, যাদের মধ্যে কামোত্তেজনা খুব বেশি, অন্ধ-আবেগ, উত্তেজনা ও অপরাধ প্রবণতা রয়েছে এবং দুর্বলের উপর অত‍্যাচার করার প্রবণতা রয়েছে, লোভ-লালসা বেশি, অল্পতেই ক্রোধ-উত্তেজনা ও উন্মাদনা প্রকাশ পায়, নিষ্ঠুরতায় অথবা অপরের ক্ষতি করে আনন্দ পায়, মারামারি খুনোখুনিতে জড়িয়ে পড়ে, সচেতন মনের যথেষ্ট বিকাশ না ঘটার ফলে যুক্তি-বিচারের ধার ধারে না যারা, যাদের মধ্যে রয়েছে মিথ্যা দম্ভ, পৌরুষের অহংকার, যেনতেন প্রকারে এমনকি অসৎ উপায়েও কার্যসিদ্ধি করতে অথবা কাঙ্ক্ষিত বস্তু লাভের চেষ্টা ক'রে থাকে। মোটেও সদাচারী নয়~ মিথ‍্যাচারী। অসৎ ছেলে বা লোকেদের সঙ্গেই বেশি মেলামেশা করে, এবং নেশাদ্রব্যের প্রতি তীব্র আকর্ষণ বোধ ক'রে থাকে, নারী দর্শনে নিজেদেরকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে অক্ষম, সুযোগ পেলে এমন মানুষই সম্ভাব্য ধর্ষক হতে পারে। 

মা--বাবার কর্তব্য, ছোটবেলা থেকেই ছেলে-মেয়েদের আচরণের উপর সজাগ দৃষ্টি রাখা।। আচরণগত ত্রুটি বা অস্বাভাবিকতা নজরে এলেই, তার প্রতিকারে সচেষ্ট হওয়া। যদিও উপযুক্ত শিক্ষা ও চিকিৎসা কেন্দ্রের বড়ই অভাব, এখন সেই অভাব দূরীকরণে সচেষ্ট হয়েছে 'মহাধর্ম' মিশন।

'মহাধর্ম' সম্পর্কে বিশদভাবে জানতে আগ্রহী হলে, এই মহা বৈপ্লবিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে চাইলে, গুগল সার্চ করুণ:~ মহাধর্ম, মহামনন, মানবধর্মই মহাধর্ম, MahaDharma, MahaManan


ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রবন্ধগুলি পড়ুন।  https://mahadharma.wixsite.com/book

Comments

Popular posts from this blog

S-Existence and its Contrary Existence

অত্যাধিক যৌন উত্তেজনা ও উন্মাদনা মানবসমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা! ~মহর্ষি মহামানস