ভয়ঙ্কর স্মৃতি থেকে মুক্ত হওয়ার উপায়



বেদনাদায়ক স্মৃতি থেকে মুক্ত হওয়ার পদ্ধতি।
~মহর্ষি মহামানস

ভয়ঙ্কর স্মৃতি অথবা অত্যন্ত কষ্টদায়ক অসুস্থকর স্মৃতি অথবা অনাকাঙ্ক্ষিত স্মৃতিকে জীবনভর বয়ে বেড়ানো মানবজীবনের এক বড় কঠিন সমস্যা। ভুক্তভোগী মাত্রই জানেন, এইরকম কোনো একটি স্মৃতির সঙ্গে লড়াই করে বেঁচে থাকা কী দুঃসহ ব‍্যাপার। এরকম স্মৃতির কারণে কিছু কিছু মানুষকে জীবনের মূল স্রোত থেকে বিচ‍্যুত হয়ে মানসিক প্রতিবন্ধী হয়ে পড়তেও দেখা যায়।

এখন, আমৃত্যু বয়ে বেড়ানো 'ট্রম্যাটিক মেমরি’ বা
সাংঘাতিক এই স্মৃতির তাড়না থেকে মুক্ত হয়ে, সুস্থভাবে বেঁচে থাকা কিভাবে সম্ভব!?

কিছু মানুষকে দেখা গেছে, তারা কোনো একটি দুঃখের স্মৃতিকে সারাজীবন বুকের মাঝে আঁকড়ে ধরে রেখেই বেঁচে থাকতে চায়। এখানে তাদের কথা নিয়ে আলোচনা করছি না। যদিও সেও একধরনের মানসিক অসুস্থতা। 

এর সমাধান করতে হলে, প্রথমে আমাদের মন সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক। আমাদের মন হলো একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন সফটওয়্যার বিশেষ। আর, কোনো একটি বিশেষ স্মৃতি হলো, তার মধ্যে সৃষ্ট হওয়া এবং অবস্থান করা একটি সফটওয়্যার ফাইল। 

'মন' যেমন একটি সফটওয়্যার, তেমনই আমাদের মস্তিষ্কসহ সমগ্র শরীর-যন্ত্র হলো হার্ডওয়্যার বিশেষ। এই কঠিন সমস্যার সমাধানে এযাবৎকাল অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ওষুধ বা ড্রাগ প্রয়োগের দ্বারা স্নায়ু ও মস্তিষ্ককে অবশ বা বিকল করে দিয়ে এর সমাধানের বৃথা চেষ্টা হয়ে আসছে। এর দ্বারা সমস্যা আরও বেড়েছে বৈ কমেনি। রোগীকে স্বাভাবিক জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়নি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। 

শুধুমাত্র ছোটখাটো বা হালকা ধরনের সমস্যার ক্ষেত্রে রোগীকে সাময়িকভাবে ঘুম পাড়িয়ে রাখতে পারলে, এর সমাধান সম্ভব হলেও, সাংঘাতিক বা ভয়ঙ্কর মানসিক পীড়ার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি কার্যকর হয়না।

অনাকাঙ্ক্ষিত স্মৃতিকে অর্থাৎ স্মৃতির ফাইলটিকে কোনো নির্মল বা ক্ষতিকর নয় এমন পদ্ধতিতে মুছে বা ডিলিট করে দিতে পারলেই এই যন্ত্রণাদায়ক সমস্যার প্রকৃত সমাধান সম্ভব হবে। 

কি সেই পদ্ধতি? সেটি হলো সরল ও বিজ্ঞান সম্মত মেডিকেল হিপ্নোসিস বা সেল্ফ-হিপ্নোসিস পদ্ধতি। যথেষ্ট অভিজ্ঞতা থাকলে, খুব গভীর ট্রান্সের মধ্যে ডুবে গিয়ে অথবা অত্যন্ত প্রাজ্ঞ কোনো বিশেষজ্ঞের সাহায্যে গভীর হিপ্নোটিক স্টেজে ডুব দিয়ে, অনিষ্টকর সেই বিশেষ ফাইলটাকে ওপেন করতে হবে। তারপর কম্পিউটারে যেভাবে কোনো ফাইলকে ডিলিট করা হয়, কতকটা সেই ভাবে, মনশ্চক্ষের স্ক্রিনে ফাইলটাকে সিলেক্ট করে, ডিলিট বাটন টিপে দিতে হবে। 

সুষুপ্তি যোগ অথবা ভাবাবেশ মূলক ধ‍্যান বা মেডিটেশনের মাধ্যমে গভীর ট্রান্সের মধ্যে ডুবে গিয়েও এটা করা যায়।


পুরোনো দিনের কম্পিউটারে যেমন কোনো বড় ফাইল ডিলিট করতে গেলে, মনিটরের স্ক্রিনে একটা দৃশ্য দেখা যেতো, অনুরূপ দৃশ্য মনের পর্দায় ভিজূয়ালাইজ করতে হবে। একদিনের সিটিং-এ পুরোপুরি ডিলিট নাও হতে পারে, সেক্ষেত্রে কয়েক দিন অনুশীলন করলেই সম্পূর্ণ সমাধান সম্ভব। 

একসময় এই 'মাইন্ড প্রোগ্রামিং' বা 'রি-প্রোগ্রামিং' পদ্ধতিতে আমি অনেক মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। ধন্যবাদ।

Comments

Popular posts from this blog

S-Existence and its Contrary Existence

অত্যাধিক যৌন উত্তেজনা ও উন্মাদনা মানবসমাজের এক জ্বলন্ত সমস্যা! ~মহর্ষি মহামানস

ধর্ষণ : এক জ্বলন্ত সমস্যা এবং তার সমাধান